নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বলাৎকারের দায়ে এবং বলাৎকারের সহযোগিতার দায়ে দন্ডিত মাওঃ আব্দুর রশিদ মোহাম্মদ ইউসুফ ও হাফেজ মাসুম বিল্লাহকে কারাগারে প্রেরণ করা হলেও এখনো তাদেরকে প্রতিষ্ঠান থেকে কোন প্রকার লিখিতভাবে শাস্তি দেওয়া হয়নি বা বরখাস্ত করা হয়নি। এখনো তারা দুই জনই স্ব-পদে বহাল আছে দাপ্তরিক ভাবে। অন্যদিকে মামলার বাদী ভূক্তভোগীর মাকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধমকি দেওয়া হচ্ছে মামলা তুলে নিতে এবং আপোষ করার জন্য।

গত (১ মার্চ) লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জের আত্-তামরীন ইন্টারন্যাশনাল হিফযুল কুরআন মাদ্রাসার ১০ বছরের এক ছাত্রকে বলাৎকারের দায়ে হাফেজ মাসুম বিল্লাহ ও বলাৎকারের বিষয়টি গোপন করে ভূক্তভোগী ছাত্রকে বেদম প্রহার করার দায়ে মাওঃ আব্দুর রশিদ মোহাম্মদ ইউসুফ কে আদালতের মাধ্যমে কারাগরে প্রেরণ করে চন্দ্রগঞ্জ থানা পুলিশ।
গত (১৪ এপ্রিল) সকাল ১১টার দিকে আমাদের টিম নিয়ে আমরা হাজির হই আত্-তামরীন ইন্টারন্যাশনাল হিফযুল কুরআন মাদ্রাসার বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে। সেখানে গিয়ে দেখি খুবই করুন পরিস্থিতি। গত (২ মার্চ) মাদ্রাসার বোর্ড মেম্বারদের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। প্রথমত আ ফ ম আব্দুস সাত্তার ও মাওঃ ইয়াছিন হায়দার কে যুগ্নভাবে আত্-তামরীন মা্দ্রাসা শাখা, স্কুল শাখা ও হিফজ শাখার সকল দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরবর্তীতে আমাদের হাতে ঐ সভার কার্যবিবরণীর একটি কপি আসলে এবং আমরা মাদ্রাসায় যাবো শুনলে রাতের মধ্যেই সংশোধন করে আ ফ ম আব্দুস সাত্তারের নামের সামনে প্রধান লাগানো হয়। আরেকটি সিদ্ধান্ত হয় ৩ সদস্যের একটি বোর্ড গঠন করা হয়। সেখানে প্রধান হিসেবে ছিলেন মোঃ নুরুল ইসলাম (কর্ণফুলী টাইলস), তারপর ছিলেন ছালাউদ্দিন জুয়েল ও মোঃ দেলোয়ার হোসেন। তদন্ত কমিটির প্রধান কাছে তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মোবাইল ফোনে আমাদের সাথে খুবই অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। তিনি জানান এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়, আপনি জানার কে? আর তদন্ত এখনো করা হয়নি। তারপরে তাকে অনেক গুলো প্রশ্ন করলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং লাইন কেটে দেন। পরবর্তীতে ছালাউদ্দিন জুয়েলকে মোবাইলে ফোন করলে তিনি বলেন তদন্ত রিপোর্ট করা হয়েছে শুধু স্বাক্ষর বাকী। অথচ তদন্ত বোর্ডের প্রধান জানালো এখনো করা হয়নি, আমরা পরে করে নিব। ২মার্চ ঐ সভায় লেখা ছিল পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য। ৩য় সদস্য মোঃ দেলোয়ার হোসেনকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান আমি এই বিষয়ে কিছুই জানি না। ঐ সময় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আ ফ ম আব্দুস সাত্তারের কাছে জানতে চাই, এখনো কেন মাওঃ আব্দুর রশিদ মোহাম্মদ ইউসুফ ও হাফেজ মাসুম বিল্লাহর বিরুদ্ধে কোন প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি? এই ব্যাপারে তিনি নিরব ছিলেন। আমরা আব্দুর রশিদের শিক্ষাগত যোগ্যতার ব্যাপারে জানতে চাইলেও কেউ কিছু জানাতে পারেনি। কারন মাদ্রাসার অফিসে কোন শিক্ষক বা হুজুরের ব্যক্তিগত কাগজপত্রের কোন ফাইল নাই। তাহলে প্রশ্ন হলো আব্দুর রশিদের যদি শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকে তাহলে তিনি কি করে ৪টি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হতে পারে? নাকি তাকে দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা কামানোর একটি মেশিন চালু করে রেখেছে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী।
প্রতিষ্ঠানের যেকোন বিষয়ে সবার প্রশ্নের জবাবের তীর ছিল চন্দ্রগঞ্জ বাজারের হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী মোঃ দেলোয়ার হোসেনের দিকে। আমরা দেখা করতে যাই দেলোয়ার হোসেনের হার্ডওয়্যার দোকানে। তাকে প্রশ্ন করা হয় আব্দুর রশিদ এবং মাসুম বিল্লাহর বিরুদ্ধে এখনো কেন প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় নি? তিনি জানান তদন্ত বোর্ডের সদস্যদের গাফিলতির কারনে এখনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় নি। আমরা স্থানীয়ভাবে জানতে পারি মাওঃ আব্দুর রশিদ যদি কখনো জামিনে আসে এবং এই প্রতিষ্ঠানে আসে তাহলে যেকোন ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটতে পারে, ঘটলে এই ঘটনার দায়ভার কে নিবে? তিনি বলে ব্যাপারে আমি জানি না। এ বিষয়ে কোন নিউজ না করার জন্য তিনি আমাদের অনুরোধ করেন এবং উৎকোচ দেওয়ার বৃথা প্রলোভন দেখান।
স্থানীয় অনেকে জানায়, রশিদ হুজুর উত্তরণ হাউজিং এর নাম ভাঙ্গিয়ে সাধারন মানুষের লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আর যারা এখন রশিদ হুজুরকে পুনরায় চন্দ্রগঞ্জে আনতে চাচ্ছে তারা সবাই রশিদ হুজুরের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করেছে এবং করতেছে। অনুসন্ধানে জানা যায় রশিদ হুজুর নিজের স্ত্রীর নামে নোয়াখালীর মাইজদীতে মনপুরা মৌজায় উত্তরণ হাউজিং এর নামে ক্রয়কৃত ৫২লক্ষ টাকার জমি কিছু অংশীদার নিজের দিকে টেনে তাদেরকে ডাম-বাম বুঝিয়ে রেজিষ্ট্রি করে নেয়। এছাড়াও স্থানীয়ভাবে জানাযায়, রশিদ হুজুর চন্দ্রগঞ্জের আনাচে কানাছে অনেক জমি ক্রয় করেছে নামে বেনামে । স্থানীয় এক মুরুব্বী জানায় রশিদ হুজুরের পাপ গাবীন হয়ে গেছে, তাই তার সব অপকর্ম বের হয়ে আসতেছে। এছাড়াও রশিদ হুজুর আত-তামরীণ মাদ্রাসা, স্কুল শাখা, হেফয শাখা সকল দায়িত্বে ছিলেন। কোন শাখারই হিসাব তিনি কখনো সঠিক ভাবে দিতেন না। কয়েক জন শেয়ার হোল্ডারকে নিজের দলে এনে এসব অপকর্ম করছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অংশীদার জানায়।
এছাড়াও আত্-তামরীণ ও উত্তরণ হাউজিং এর কয়েকজন শেয়ারদার এর বিরুদ্ধে আমাদের কাছে অভিযোগ আছে অন্য প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে বা নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকার পরেও প্রতিষ্ঠান থেকে নানা ভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ও প্রতিষ্ঠানের জমি, প্ল্যাট নিজের নামে করে নিয়েছে নানা রকম অপকৌশলে। এদের আয়ের সাথে সম্পদের কোন মিল নাই। এই বিষয়েও আমাদের অনুসন্ধান চলমান।
রশিদ হুজুরের মাদ্রাসায় পুনরায় যোগদান করার বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পরিমল কুমার ঘোষ জানান, বিষয়টি আমরা জানতাম না, এই ধরনের ঘৃণীত লোক কখনই একটা প্রতিষ্ঠানের প্রধান থাকতে পারে না। বিষয়টি নিয়ে আমি ইউএনও স্যারের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করছি।
চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মমর্তা (ওসি) এ কে ফজলুল হক এর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, রশিদ হুজুর পুনরায় যোগদান করবে কিনা এটা আমাদের বিষয় না, রশিদ হুজুর পুনরায় যোগদান করলে যদি সামাজিক কোন অস্থিতিশীল পরিস্থিতির তৈরী হয় তাহলে আত্-তামরীণ প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাই এটার দায়ভার বহন করতে হবে।
আরও পড়ুন
লক্ষ্মীপুরে রায়পুর সাব-রেজিস্ট্রারের অপসারনের দাবীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ২৮৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গাছের চারা বিতরণ
চন্দ্রগঞ্জে পরিত্যক্ত ভবনের ছাদ ধসে ডাক্তারসহ আহত ২জন