মুক্তিকন্ঠ

ভয়েস অফ ফ্রিডম ফাইটার ১৯৭১

চন্দ্রগঞ্জে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে বিপাকে প্রবাসীরা, ব্যাংকেও পাচ্ছেনা সমাধান

শেয়ার করুন

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কয়েক হাজার প্রবাসী। বিভিন্ন দেশ থেকে আসার  সময় অনেকে কিছু বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে আসেন। চন্দ্রগঞ্জ বাজার এমনকি লক্ষ্মীপুর জেলায়ও কোন ব্যাংকে মানি এক্সচেঞ্জ লাইসেন্স না থাকায় প্রবাসীরা বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে পড়ছেন বিড়াম্ভনা।  

সম্প্রতি গত সোমবার (১২মে) চন্দ্রগঞ্জ বাজারে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) গোপন তথ্যের ভিত্তিতে এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লক্ষ্মীপুর জেলা ক্যাম্পের ক্যাপ্টেন রাহাতের নেতৃত্বে বৈদেশিক মুদ্রার অবৈধ লেনদেনের বিষয়ে একটি অভিযান পরিচালনা করা হয়। এতে শ্রী শ্রী নিতাই গৌর বস্ত্রালয় ও আল মদিনা বস্ত্রালয় থেকে প্রায় বাংলাদেশী ৪৮ লক্ষ ৬ হাজার দশ টাকা মূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা জব্দ করা হয়। পরে নিতাই গৌর বস্ত্রালয়ের মালিক খোকন দেবনাথ ও আল মদিনা বস্ত্রালয়ের মালিক খলিলুর রহমানকে পৃথক দুটি মামলায় কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এই ঘটনার পর পরই চন্দ্রগঞ্জসহ আশে পাশের এলাকায় প্রবাসী ও বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচা করার সাথে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ীদের মধ্যে দেখা যায়, চরম উদ্বেগ ও উৎকন্ঠায়।

গত দুই দিন থেকে প্রবাস ফেরত বিভিন্ন প্রবাসী খুবই কষ্টে দিনানিপাত করছে। বিদেশ থেকে আসার সময় সরকারী নিয়ম অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে আসেন অনেক প্রবাসী। প্রবাসী আধিক্যের কথা চিন্তা করে অনেক ব্যবসায়ী লেনদেন করার জন্য মাঝে মাঝে বৈদেশিক মুদ্রায়ও বিনিময় করে। পরে ব্যবসায়ীরা মানি এক্সচেঞ্জ গিয়ে এসব বৈদেশিক মুদ্রা বাংলা টাকায় পরিবর্তন করে আনে। সম্প্রতি অভিযানের কারনে কোন ব্যবসায়ী বৈদেশিক মুদ্রা নিতে চাচ্ছে না, যার কারনে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স যোদ্ধারা পড়েছে করুন বিপাকে।

সম্প্রতি বিদেশ থেকে আসা মো. করিম নামের একজন জানান, ‘আমি বিদেশ থেকে আসার সময় কিছু বৈদেশিক মুদ্রা সঙ্গে নিয়ে আসি। নিরাপত্তা জনিত কারনে চৌমুহনী গিয়ে এগুলো ভাঙ্গাতে পারি না। আগে বাজার কিছু ব্যবসায়ী রাখতো। আমরা কেনাকাটা করলে বৈদেশিক মুদ্রা দিলে তারা বাংলাদেশী মূল্যে জিনিসপত্রের দাম রাখতো অতিরিক্ত থাকলে দিয়ে দিত। কিন্তু সম্প্রতি অভিযানের কারনে এখন কোন ব্যবসায় বিদেশী টাকা নিচ্ছে না এবং কি চন্দ্রগঞ্জের কোন ব্যাংকও বৈদেশিক মুদ্রা নিতে চাচ্ছে না। বাংলাদেশের রেমিট্যান্স যোদ্ধা হিসেবে আমরা পদে পদে শুধু হয়রানীর শিকার হচ্ছি। সরকারের উচিত তৃণমূল পর্যায়ে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনের ব্যবস্থা করা।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চন্দ্রগঞ্জ বাজারের একজন কাপড় ব্যবসায়ী জানান, ‘আমাদের অধিকাংশ গ্রাহক হয় প্রবাসী না হয় কোন প্রবাসীর পরিবারবর্গ। অনেক সময় তারা কেনাকাটা করতে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে আসে। তখন আমরা বর্তমান দাম অনুযায়ী বিক্রিত মূল্য পরিশোধ করে বাকী থাকলে তাদেরকে ফেরত দিয়ে দিই। আবার অনেক সময় অনেকে প্রবাসে যাওয়ার সময় বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন হয় তখন আমরা আমাদের কাছে থাকা মুদ্রা গুলো তাদের বাজার মূল্য অনুযায়ী বিক্রি করে দিই । এতে করে রেমিট্যান্স যোদ্ধারা উপকৃত হয়। কিন্তু সম্প্রতি অভিযানের পর থেকে আমরা ভয়ে আর বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেন করছি না। যার কারনে গত কয়েকদিনে অনেক প্রবাসীকে বিভিন্ন পেরেশানীতে পড়তে দেখেছি।’

ভূক্তভোগী প্রবাসী ও ব্যবসায়ীরা জানান, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অনেক অসাধ্য সাধন করেছেন। তাই তৃণমূল পর্যায়ে বৈদেশিক মুদ্রা সহজভাবে লেনদেন করার জন্য সহজ ব্যবস্থা করার  নিমিত্তে প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ে ১টি করে মানি এক্সচেঞ্জ অনুমোদন করার জোর দাবী জানান। এছাড়াও সরকারী নিয়মনীতি মেনে ইউনিয়ন পর্যায়ে মানি এক্সচেঞ্জ হলে সরকার যেমন লাভবান হবে তেমনি প্রবাসীরা উপকৃত হবে। ফলে মালিলন্ডারিং এর মত অপরাধ কমে যাবে।’ তবে অনেক ব্যাংক কর্মকর্তার দাবী, জেলার কোথাও কোন ধরনের মানি এক্সচেঞ্জ নেই। এ জন্যে প্রবাসীরা নানা হয়রানীর শিকার হতে হচ্ছে।

চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.ফয়জুল আজীম নোমান বলেন, অনুমোদন ছাড়া কেউ বিদেশী মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবেনা। যদি কেউ করে থাকেন, তাহলে এটি সম্পূর্ন অবৈধ। ইতিমধ্যে অবৈধ বিদেশী মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয়ের অপরাধে অভিযান চালানো হয়েছে। দুই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলা হয়। তারা বর্তমানে জেল-হাজতে রয়েছে। অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষনা দেন তিনি।


শেয়ার করুন