মোহাম্মদ ফয়সাল, যুক্তরাষ্ট
বাংলাদেশের রাজনীতির মঞ্চে সবচেয়ে বড় অভিনয়টি এখন আর রাজনীতিবিদরা একা করেন না—বরং “সুশীল সমাজ” ও “কথিত বুদ্ধিজীবীরা” এই মঞ্চের এক প্রভাবশালী অভিনেতায় পরিণত হয়েছেন। তাদের ভূমিকা যেন রাজনৈতিক দলগুলোর চেয়েও বেশি কৌশলী, কখনো সরাসরি নয়, কিন্তু সর্বদা প্রভাব বিস্তারকারী। ৫ আগস্টের পর বিএনপি যখন নির্বাচনের দাবি তুলল, তখন এই সমাজের বহু মুখ ঘোষণা করল—“বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছে।” অথচ গণতন্ত্রে নির্বাচনের দাবি কোনো অপরাধ নয়; বরং এটি রাজনৈতিক দলের সাংবিধানিক অধিকার ও দায়িত্ব। কিন্তু এই বক্তব্যগুলো থেকে বোঝা যায়, দেশের এক শ্রেণির বুদ্ধিজীবী দীর্ঘদিন ধরেই একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক ধারার প্রতি মানসিক আনুগত্য পোষণ করে আসছে।
তারপর শুরু হয় “সংস্কার” শব্দের বায়বীয় প্রচারণা। বলা হয়—“নির্বাচন এখন দিলে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে এবং তারাও স্বৈরাচার হয়ে উঠবে।” অর্থাৎ জনগণের ভোটের ওপর অবিশ্বাস প্রকাশ করে তারা আগেভাগেই একধরনের ভয় বা বিভ্রম ছড়ানোর চেষ্টা করল। প্রশ্ন হলো—এই ভয় আসলে কার? জনগণের নয়, বরং তাদেরই, যারা চায় না রাষ্ট্রের ক্ষমতার কেন্দ্র পরিবর্তন হোক।
বাংলাদেশের সুশীল সমাজ আসলে দেশের সাধারণ মানুষের মনস্তত্ত্ব খুব ভালোভাবেই বোঝে। তারা জানে—যে দল ক্ষমতায় থাকবে, তাকে সময়ের ব্যবধানে ভুল করতেই হবে; প্রশাসনিক অদক্ষতা, দুর্নীতি, অথবা রাজনৈতিক চাপে মানুষের বিরক্তি বাড়বেই। আর তখনই গণমানসে নতুন অসন্তোষ জন্ম নেয়, যার সুযোগ নেয় ক্ষমতালিপ্সু দলগুলো। এই অবস্থাকে কাজে লাগিয়ে বুদ্ধিজীবীদের একাংশ “গণতন্ত্র রক্ষার” আড়ালে আসলে রাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করার কাজটি করে থাকে—যাতে ক্ষমতা পুরোপুরি হাতবদল না হয়, বরং ঘুরে ফিরে একই চক্রের মধ্যেই আবর্তিত হয়।
এটাই বাংলাদেশের রাজনীতির সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি—এখানে বুদ্ধিজীবীরা সত্যের ভাষ্যকার নয়, বরং পরিস্থিতির সুবিধাভোগী। যখন ক্ষমতাসীনদের জনসমর্থন কমে, তারা কিছুটা “বিরোধীতার অভিনয়” করে, কিন্তু ক্ষমতা পরিবর্তনের বাস্তব সম্ভাবনা দেখা দিলেই তারা ভীত হয়ে পড়ে। কারণ, তাদের স্বার্থ, প্রাপ্তি, ও প্রভাব সবই ক্ষমতার নিকটবর্তীতার ওপর নির্ভরশীল।
বাংলাদেশের গণতন্ত্র আজ এমন এক দিকপাল খুঁজছে, যারা বুদ্ধিজীবিতার আড়াল থেকে নয়, জনগণের বিশ্বাস থেকে কথা বলবে। কারণ জনগণের মন—এ দেশের আসল শক্তি। মানুষ জানে কে শোষণ করছে, কে প্রতারণা করছে, আর কে তাদের কণ্ঠস্বর চেপে রাখছে।
বাংলাদেশের রাজনীতির প্রকৃত সংস্কার শুরু হবে সেদিন, যেদিন “বুদ্ধিজীবী”রা নিজেদের আয়নায় সত্যিকারভাবে দেখবে—কাদের হয়ে, কোন স্বার্থে, তারা কথা বলে আসছে।
(মোহাম্মদ ফয়সাল, সম্পাদক ও প্রকাশক- মুক্তিকন্ঠ)
আরও পড়ুন
লক্ষ্মীপুরে রায়পুর উপজেলা শ্রমিকদলের আংশিক কমিটি অনুমোদন
গুম-খুনের শিকারদের পরিবারের পাশে থাকবে বিএনপি : এ্যানি
লক্ষ্মীপুর চন্দ্রগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা মনির গ্রেফতার