মুক্তিকন্ঠ ডেস্কঃ
লক্ষ্মীপুরে ইউপি চেয়ারম্যান ও প্যানেল চেয়ারম্যনসহ ২৫জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে চন্দ্রগঞ্জ বাজার আফজাল রোড সিএনজি স্ট্যান্ডের চাঁদাবাজ খ্যাত মামলাবাজ সেলিম।
গত (৬ এপ্রিল) বৃহস্প্রতিবার লক্ষ্মীপুর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিনকে ১ম আসামী করে মোট ২৫ জনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন সিএনজি স্ট্যান্ডের প্রকাশ্য চাঁদাবাজ সেলিম।
মামলার এজারহার সূত্রে জানা যায়, চন্দ্রগঞ্জ বাজারে সেলিমের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে এসে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এ ঘটনায় বিচারের জন্য গেলে সেলিমকে ধমক দিয়ে অভিযুক্তদের দাবি করা টাকা দিতে বলেন চেয়ারম্যান নুরুল আমিন। পরে ঘটনাটি স্থানীয় গণ্যমান্যদের জানালে অভিযুক্তরা সেলিমের ওপর আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। গত ৫ এপ্রিল দুপুর ১২টার দিকে চন্দ্রগঞ্জ বাজারের যাত্রী ছাউনি এলাকায় নুরুল আমিনসহ অভিযুক্তরা সেলিমের পথরোধ করেন। এসময় তাদের দাবিকৃত দুই লাখ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে সেলিমকে পিটিয়ে আহত করে। একপর্যায়ে গলাটিপে তাকে হত্যার চেষ্টা করেন অভিযুক্তরা। এসময় তার পকেটে থাকা পাঁচ হাজার টাকা ও প্রায় ২৩ হাজার টাকা মূল্যের একটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায়। ১০ দিনের মধ্যে চাঁদার টাকা না দিলে ও ঘটনাটি নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে তারা সেলিমকে হত্যার পর মরদেহ গুমের হুমকি দেন বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, যাত্রী ছাউনীর ভিতরের জোনাকী কাউন্টারের মাছুম, যমুনা কাউন্টারের জহির, মিয়ামী কাউন্টারের ইকবাল ও যাত্রী ছাউনীর সাথের খাবার দোকানের জাকিরসহ স্থানীয় অনেকেই জানান, গত (৫ এপ্রিল) বুধবার দুপুর ১২টার দিকে যাত্রী ছাউনীর সামনে বা আশেপাশে এই ধরনের কোন ঘটনা ঘটে নি। যমুনা কাউন্টারের জহির জানান, চেয়ারম্যান সাহেব এমনিতেও কখনো যাত্রী ছাউনী এলাকায় আসেন না, তিনি এই জনসম্মুখে যেখানে সব সময় ট্রাফিক পুলিশ, থানার পুলিশসহ হাজার হাজার মানুষ থাকে সেখানে এধনের কাজ করা হাস্যকর।
এছাড়াও স্থানীয়ভাবে জানাযায়, চন্দ্রগঞ্জ বাজারে সেলিমের কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নাই। সে ছিল একজন মাদকব্যবসায়ী, বর্তমানে চন্দ্রগঞ্জ পশ্চিম বাজার টুইন টাওয়ারের সামনে সে একটি জুয়ার আসর পরিচালনা করে।
দলীয় সরকারের ও পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাওয়া সেলিমই এখন মামলাবাজ, ভূমিদস্যু, মাদক কারবারী, সিএনজি স্ট্যান্ডের চাঁদাবাজ নামে খ্যাত। সে স্থানীয় দেওপাড়া গ্রামের নুর মিয়া বেপারী বাড়ির আমির হোসেনের ছেলে। এছাড়াও সেলিম চন্দ্র্রগঞ্জে ডাকাত বাবলু বাহিনীর সক্রিয় সদস্য বলেও জানান চন্দ্রগঞ্জ বাজারের অনেকেই। কথিত বন্ধুক যুদ্ধে নিহত ডাকাত নাছিরের সক্রিয় সদস্য ছিল সে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসী জানায় তার কাছেই রয়েছে ডাকাত নাছিরের রেখে যাওয়া অস্ত্রভান্ডার ।
গত ৩০/১০/২০২২চন্দ্রগঞ্জ ফ্লোরিডা ফিলিং ষ্টেশনে ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগের মারামারি হয়। পরবর্তীতে সেলিম বাদী হয়ে লক্ষ্মীপুর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করে ০৭/১১/২০২২ তারিখে। যাতে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ১ম আসামী করা হয় দৈনিক ভোরের দর্পণ পত্রিকার চন্দ্রগঞ্জ(লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি মোহাম্মদ হাছানকে। তখন সেলিমকে মুঠোফোনে জিজ্ঞাসা করা হলে সে বলে, আমি জানি না কাকে আসামী করা হয়েছে, আমাকে বলছে স্বাক্ষর করতে আমি করেছি, এছাড়াও তাকে স্বাক্ষী হওয়ার কথা বলে বাদী বানানো হয়েছে বলে তিনি জানান। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, মূলত তাকে দিয়ে এগুলো করাচ্ছে সাবেক ছাত্রলীগে নেতা কাজী মামুনুর রশিদ বাবলু।
এর আগে সেলিম নিজ বাড়িতে তার চাচাদের জমি জোর করে দখল করে রাখে, তখন তার চাচা পান বিক্রেতা কালা মিয়া, ও বধু মিয়া প্রতিবাদ করলে তাদের নামেও চাঁদাবাজির মামলা করায় এই সেলিম। এখন পর্যন্ত ঐ জায়গা সেলিমগংদের দখলে আছে বিনা দালিলিকভাবে আর অভাবে অনটনে দুঃখ-কষ্টে দিনযাপন করছে কালা এবং বধুরা।
বাদী সেলিম জানান, ‘সজীবসহ তার সাথের লোকজন তার উপর আক্রমণ করে চাঁদার জন্য, তবে চেয়ারম্যান ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, না চেয়ারম্যান ছিল না’।
চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুুরুল আমিন জানান, ‘আমি বিষয়োল্লিখিত বিষয়ে কিছুই জানি না। এ ঘটনায় সেলিম আমার কাছে কখনো আসেনি, আর ঘটনার তারিখ ও সময়ে আমি ইউনিয়ন পরিষদে উপস্থিত ছিলাম। সেলিম নিজেই একজন সিএনজি স্ট্যান্ডের প্রকাশ্য চাঁদাবাজ, তার বাজারে কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নাই’। এছাড়াও তিনি আরো জানান, মিথ্যা মামলা করার বিষয়ে তিনি আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
আরও পড়ুন
লক্ষ্মীপুরে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ বীরমুক্তিযোদ্ধা তোফায়েল’র ইন্তেকাল
রাজনৈতিক ইমেজ ক্ষুণ্ণ করার জন্যই মাহফিল বন্ধের প্রোপাগান্ডা–শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী
লক্ষ্মীপুরে সিঁদ কেটে ঘরে ঢুকে নারীকে গণধর্ষণ, গ্রেফতার-২