মুক্তিকন্ঠ

ভয়েস অফ ফ্রিডম ফাইটার ১৯৭১

লক্ষ্মীপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কর্তৃক একাধিক ইউপি চেয়ারম্যান লাঞ্ছিত!

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইমরান হোসেন।

শেয়ার করুন

মুক্তিকন্ঠ ডেস্কঃ

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ১০নং চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিনকে  সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজে প্রকাশ্যে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল, শারিরিক ভাবে লাঞ্চিত ও তুলে নেওয়ার হুমকী দিয়েছে। এ ঘটনায় চন্দ্রগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ি, এলাকাবাসী ও রাজনৈতিক মহলে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। গত সোমবার (৩০জানুয়ারী) চন্দ্রগঞ্জ মাছ বাজারে এ লাঞ্চিত করার ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার ভুক্তভোগী চেয়ারম্যান জেলা প্রশাসককে অবহিত করে প্রতিকার চেয়েছেন বলে জানা গেছে। এই ঘটনাটি চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জেলা প্রশাসকের সাথে স্বাক্ষাৎ করে প্রতিকার চেয়েছেন । জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ এ ব্যাপারে প্রতিকার করবেন বলে তাদের আশ্বস্থ করেছেন। 

নোয়াখালীর হাতিয়ায় মানবন্ধনের খন্ডচিত্র

জানাযায়,গত সোমবার (৩০ জানুয়ারী) সন্ধ্যার পরে সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা  মো. ইমরান হোসেন  চন্দ্রগঞ্জ মাছ বাজার বহুতল শেড নির্মাণ কাজ আকস্মিক পরিদর্শন করতে আসেন। ঐ সময় চেয়ারম্যান চন্দ্রগঞ্জ বণিক সমিতির একটি অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিল। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ফোন পেয়ে চেয়ারম্যান নুরুল আমিন দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা  চেয়াম্যানকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কর্তৃক নিযুক্ত ঠিকাদার কাজ শুরু না করার কারণ জানতে চান এবং এক পর্যায়ে উত্তোজিত হয়ে চেয়ারম্যানকে মা বাবা তুলে অশ্লীল গালাগাল, লাথি মেরে খালে ফেলে দিবেন এবং তুলে নিয়ে যাবেন বলে হুমকী ধমকী দিতে থাকেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার এমন অশ্লীল এবং অশালীন আচরণে  ইউপি চেয়ারম্যান ও ঘটনাস্থলে উপস্থিত চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, প্যানেল চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম (শিপন খলিফা), ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য আব্দুর রহমান আরজু ও উপস্থিত ব্যবসায়িরা হতভম্ব হয়ে যান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মত একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার এমন আচরণ কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না বাজারের ব্যবসায়ি, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় রাজনৈতিক মহল।  

উল্লেখ্য চন্দ্রগঞ্জ বাজারের গত ৩ বছরের বাজার ইজারার বাজার উন্নয়নের টাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার  অফিসে জমা আছে। সম্প্রতি চন্দ্রগঞ্জ মাছ বাজারকে ভেঙ্গে বহুতল মাছ বাজার শেড করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন লক্ষ্মীপুর জেলার জেলা প্রশাসক। গত ২৯ নভেম্বর (২০২২) জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ বহুতল মাছ বাজার শেডের কাজের শুভ উদ্বোধন করেন। বিধি অনুযায়ী বাজার উন্নয়নের টাকা চেয়ারম্যান ব্যয় করার কথা। কিন্তু উপজলো নির্বাহী কর্মকর্তা অর্থ ছাড় না দিয়ে নানা তালবাহানা করতে থাকেন। পরবর্তীতে ২৯ জানুয়ারী জেলা প্রশাসক উপজেলা  নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইমরান হোসেন ও ভুমি কর্মকর্তা মকবুল হোসেনকে সাথে নিয়ে কাজের অগ্রগতি দেখতে আসেন। চেয়ারম্যান কর্তৃক নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান হোসেন নিজের ইচ্ছামত ঠিকাদার কামরুল ইসলামকে মাছ বাজার কাজের শেডের  নির্মাণ কাজের দায়িত্ব দেন। ঘটনার দিন লক্ষ্মীপুর আইন শৃঙ্খলা মিটিংয়ের পর ইউএনও একটি ১০লক্ষ টাকার চেক চেয়ারম্যানকে দেয় এবং ঠিকাদারকে দিতে বলে। ঐদিন  বিকালে চেয়ারম্যান চেক ঠিকাদারকে দিয়ে দেয় এবং সন্ধ্যায় এই অশালীন ঘটনাটি ঘটে। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইমরান হোসেন এর আগে একই ভাবে সদর উপজেলার চরশাহী, কুশাখালী, মান্দারী ও পার্বতী নগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সাথে অশ্লীল আচরণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানতে চাইলে  ১২নং চরশাহী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহ সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম রাজু জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা  আমার সাথে কয়েকবার অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন, যা একজন জনপ্রতিনিধির সাথে করা কখনো কাম্য নয়। ১৮নং কুশাখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন মানিকের সাথেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইমরান হোসেন অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। তিনি আমার বাবা মা তুলে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করেন এবং তাকে বিনা কারনে কয়েকবার কারণদর্শানোর নোটিশ প্রদান করে হয়রানি করেন। ৫নং পার্বতী নগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অহিদুর রহমানসহ বিভিন্ন চেয়ারম্যানকে নানা কারণে অকারণে হয়রানি করেছেন। চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ আবুল কাশেম চৌধুরী জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অশ্লীল আচরণের কথা জেলা প্রশাসকের সাথে স্বাক্ষাৎ করে প্রতিকার চেয়েছি। ঘটনাস্থলে উপস্থিত চন্দ্রগঞ্জ ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম (শিপন খলিফা) ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সদস্য আব্দুর রহমান আরজু ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, একজন ইউএনও এই ভাবে খারাপ ভাষায় কথা বলতে পারে এটা আমাদের জানা ছিল না। চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের চেযারম্যান নুরুল আমিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন।

 

চন্দ্রগঞ্জ বণিক সমিতির সভাপতি কামরুজ্জামন নিজাম ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চেয়ারম্যানের সাথে অশ্লীল আচরণের নিন্দা জানিয়ে প্রতিকার দাবী করেন। অন্যথায় ব্যবসায়িদের নিয়ে  উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অপসারণের দাবীতে আন্দোলন করতে বাধ্য হবেন বলে জানিয়েছেন। 

এ ব্যাপারে জানতে শুক্রবার বিকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইমরান হোসেনের মোবাইলে বার বার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ না করে কেটে দেন। হোয়াটস এ্যাপে লিখিত ভাবে প্রশ্ন পাঠিয়েও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

শুক্রবার বিকালে লক্ষ্মীপুর জেলার জেলা প্রশাসকের মুঠোফোনে এ বিষয়ে জানতে ফোন করা হলে কল রিসিভ করেন নি। পরে জেলা প্রশাসকের সরকারী নাম্বারে হোয়াটস এ্যাপে লিখিত ভাবে প্রশ্ন পাঠিয়েও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তিনি ম্যাসেজ সিন করেছেন।

প্রসঙ্গত, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা  মো. ইমরান হোসেন এর আগে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত থাকাকালে হাতিয়া দ্বীপ সরকারি কলেজের এক শিক্ষককে লাঞ্ছিত করায় কলেজ শিক্ষার্থীরা তাকে অপসারনের দাবীতে মানববন্ধন ও ক্লাশ বর্জন অব্যাহত রাখলে আন্দোলনের মুখে তাকে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় বদলী করা হয়।


শেয়ার করুন