মোহাম্মদ ফয়সাল, যুক্তরাষ্ট্রঃ
মঙ্গলবার, জুলাই ১৮, ২০২৩, বিকালে মিছিলের পিছন থেকে চোরাগোপ্তাভাবে কৃষক দল নেতা সজিব হোসেনকে টেনে নিয়ে লক্ষ্মীপুর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মহসিন কবির সাগর ও সাধারণ সম্পাদক সেবাব নেওয়াজ এর নেতৃত্বে চন্দ্রগঞ্জ থানা কৃষক দলের সদস্য সজিব হোসেনকে কোপানো হয়। সন্ত্রাসীদের হাত থেকে বাঁচতে একটি ভবনে আশ্রয় নেয় সজিব। পরবর্তীতে ওখানেই তার মৃত্যু হয়।
এই সজিব বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে প্রাণ দিয়েছে, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছে, স্বাধীন বাংলাদেশে রক্ষী বাহিনীর ব্রাশফায়ারে হত হয়েছে, এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে মারা পড়েছে। একুশে অগাস্ট গ্রেনেড হামলায় ছিন্নভিন্ন হয়েছে। অবশেষে গত মঙ্গলবার নিহত হয়েছে। এইভাবে সজিব হয়েছে মহাশ্মশান। সজিবের রক্তপথ দিয়ে হেঁটে মুসলীম লীগের টুপি পরে মন্ত্রী হয়েছে খান বাহাদুর, আওয়ামী লীগের মুজিব কোট পরে মন্ত্রী হয়েছে চেতনা বাহাদুর, জিয়ার সাফারি সানগ্লাস পরে মন্ত্রী হয়েছে খাল-কাটা বাহাদুর।
এদেশটা হচ্ছে গরীবের ছেলেকে কুরবানি করে আব্রাহামিক ত্যাগের, দরিদ্রের ছেলেকে বলি দিয়ে কাপালিক সুখের। সজিবের রক্তমূল্যে লালু-ভুলু-দুলু-বাচ্চু-কাচ্চু-সাচ্চু গোলি থেকে রাজপথে উঠে আসে। শূয়োরের মতো খসখসে মুখমণ্ডল ক্ষমতার গ্লো ক্রিমে চকচক করে টিভি বাইটে।
সজিবের রক্তের ওপর দিয়ে লুটের টাকার প্রাডো হাঁকিয়ে চর্বি থলথলে অভিজাত এলাকার বাসিন্দা টিভি বাইটে মলত্যাগ করে। গুলশান-বনানীর লোক চাকরকে ভোট দেয় না বলে দাঁতের মাড়ি বের করে টেক্সাসের মাথাল ঝাঁকিয়ে; চাকরস্য চাকর সেই তার দাদার রেললাইনের ধারে মলত্যাগের অভ্যাসে বলে, এইখানে একটা বাড়ির দাম ২০০ কোটি টাকা।
আসলে এই যে আওয়ামী লীগ বনাম বিএনপি, মুসলমান বনাম হিন্দু কিংবা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ ও বিপক্ষ বলে যে বিভাজন রেখা এঁকে দেয়া হয় রাজনীতির মুনতাসির ফ্যান্টাসিতে; ঐ মুনতাসির যে বয়সে মুক্তিযুদ্ধে না গিয়ে পাকিস্তানে সরকারের অধীনে কর্মরত বাবা ও মামার বাড়িতে গুশতো দিয়া ভাত খাইছে; পাকিস্তান নামটি শুনেই ঘৃণায় টুথব্রাশ দিয়ে দাঁত মেজে মামার বাড়ির চকির নীচে শুয়ে যে সায়েন্স ফিকশন পড়েছে; ঐ বয়সে সজিব মুক্তিযুদ্ধের সম্মুখ সমরে প্রাণ দিয়েছে।
সজিব মরে গেলে ঐ রক্তমূল্যে ব্যাংকের লাইসেন্স কেনা যায়, পূর্বাচলে প্লট পাওয়া যায়; প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হেসে হেসে স্বাধীনতা পদক নেয়া যায়।
সজীবের রক্তমূল্যে রহমান এন্ড রহমান কোম্পানির মাজার বসে; যেখানে খাদেম থই থই করে ভক্তিরসে। যুবরাজেরা গদিনশীন হবেন এই আশায় ভক্তসব করে রব রাতি পোহাইলো।
একুশে অগাস্টের লাশের ভগ্নাংশ আর রক্তপাতের ছবিগুলোতে লাশগুলো একসঙ্গে থাকে বলে; মুজিব কোট ভক্ত ফেসবুকে ঐ ছবিগুলো বারবার দেখাতে থাকে কুমিরের বাচ্চার মতো। সজিব মরলো কেন? সিংহ এসে সুপোরী গালে পুরে ভস ভস করে দেখিয়ে দেবে, একুশে অগাস্টে ওরাও মেরেছিলো। ক্যানিবালেরা ভাবে লাশগুলো আলাদা আলাদা থাকলে; একসঙ্গে জড়ো করে ছবি তোলা না গেলেই; ইতিহাস থেকে লুকিয়ে ফেলা যাবে, প্রদীপের একা হাতে ক্রসফায়ারে মারা তিনশো লাশ। কিংবা গত পনেরো বছর ধরে মেরে দেয়া অসংখ্য বিরোধী দল কর্মীর লাশ।
এইসব গ্ল্যাডিয়েটরের খেলা শেষে কলাবতী শাড়ি পরে রাজসরোবরে হাঁস চরালেই বুঝি লোকে সুরের বেতোফেন বলে আহা উহু করবে!
শিফনের শাড়ি পরে সৌন্দর্য্য চর্চা আর অভিজাত বেগামাত করলেই যেন ভুলে যাবে লোকে, গ্লাডিয়েটরের গ্যালারিতে বসে কত লাস্যে হেসেছেন তিনি।
এই গান্ধীজী, বঙ্গবন্ধু, ভুট্টো, জিয়া কিংবা ইন্দিরার অপঘাতে মৃত্যু; এ তো প্রকৃতির প্রতিশোধ। নিউটনের তৃতীয় সূত্র; প্রত্যেক ক্রিয়ার একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। প্রজার সন্তান বলি দিয়ে ক্ষমতার দাবা খেলা, আবেগী ভাষণে আদর্শের ফলগুধারা! পৃথিবীর আর কোন দেশ আছে, যেখানে দেশপ্রেমিক নেতাদের এতো রক্তের নেশা।
আর কতো রক্ত দিলে সাধারণ মানুষের সন্তান সজিবদের দেশপ্রেমের পরীক্ষাটা শেষ হবে! ক্ষমতার চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের জন্য আর কতো লাশের নেশা এই নরভোজীদের!
রহমান এন্ড রহমানের রাজনাতনিগুলো বিলেতে, আংকেল স্যামের দেশের স্বর্গের শিশু; আর বাংলাদেশের শিশু তো ভুমিষ্ঠ হবার আগেই নাজমার গর্ভে গুলিবিদ্ধ হয় বীর ছাত্রলীগের গোলাগুলির মাঝে পড়ে। বাংলাদেশের পূর্ণিমার শরীরে অমাবস্যা নেমে এসেছিলো ছাত্রদলের লালসার লালামাখা শৃগাল স্বভাবে। এই তুই বিএনপিকে ভোট দিয়েছিস কেন বলে বিবাহিত নারীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো আওয়ামী লীগের খানসেনা।
রাজাকার থেকে রাজবদর; এইদেশের থাগস অফ বেঙ্গলেরা দেশ বিক্রি করে; মানুষ বিক্রি করে; ফইন্নি থেকে দ্রুত ধনী হয় রহমান মাজারে চোখের জলে নাকের জলে মানত করে।
দেশের চোখ কান নাক হৃদপিণ্ড হাত পা ফুসফুস আত্মাটা চিবিয়ে খায় ক্ষমতার নরভোজিরা। দেশের শব ব্যবচ্ছেদ করে দ্বিদলীয় রাজনীতির ব্যবসার মাংসের কারবারে।
দরিদ্র মনের এই ছোট লোকের বাচ্চাগুলো হীন মানুষগুলো বিকৃত শব্দে রুচিমন্দিরে পূজা দেয়; হিরো আলমের রুচি বিশ্লেষণ করে রেশমী পাঞ্জাবির নীচে ঢেকে রাখা চর্মরোগের বংশ।
কেউ মনে রাখেনা, সজিবেরও জীবন ছিলো, যে জীবন দোয়েলের শালিখের। কেউ মনে রাখেনা, সজিব কে ছিলো কী ছিলো, কেন সে খুব রাগ করে হয়েছে হিরণদাহ বিজনপব্যাথা হয়েছে আগুন!
সংকলিতঃ মাসকাওয়াথ আহসান।
আরও পড়ুন
লক্ষ্মীপুরে সিঁদ কেটে ঘরে ঢুকে নারীকে গণধর্ষণ, গ্রেফতার-২
দেশে আইনশৃংখলার অবনতির চেষ্টা করছে একটি গোষ্টি, ষড়যন্ত্রকারীদের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করা হবে –শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী
শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার মধ্যে প্রার্থক্য নেই, দূনীর্তি ও দুশাসনের কারনে দুইজনেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেনঃ এ্যানী