মুক্তিকন্ঠ ডেস্কঃ
লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে বিয়েতে রাজি না হওয়ায় মাদ্রাসাছাত্রী রোজিনা আক্তারকে ধর্ষণের চেষ্টা ও হত্যার দায়ে ৪ আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রত্যেকের ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ১ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। বুধবার (১৮ মে) বেলা ১১ টার দিকে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন।
লক্ষ্মীপুর জজ আদালতের সরকার কৌঁসুলি (পিপি) জসিম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ভিকটিমকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়৷ এক পর্যায়ে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে আসামিরা। আদালতে ঘটনাটি প্রমাণিত হয়েছে। এতে আদালত আসামিদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, রায়ের সময় আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আনোয়ার হোসেন কইলা ও আখি আক্তার রুমা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া দণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামি হুমায়ুন ও বাহার পলাতক রয়েছেন। এরমধ্যে বাহার শুরু থেকেই পলাতক। আর হুমায়ুন জামিনে গিয়ে পলাতক।
মামলার আসামিপক্ষের আইনজীবী শাকিল পাটওয়ারী বলেন, মামলার রায়ে আমরা সন্তুষ্ট নয়। ঘটনার প্রত্যক্ষ কোন সাক্ষী আদালতে উপস্থাপন করতে পারেনি। আমরা রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবো।
দণ্ডপ্রাপ্ত কইলা রায়পুর পৌরসভার দেনায়েতপুর এলাকার মৃত হানিফ মিয়ার ছেলে, আখি একই এলাকার আবদুল মতিনের মেয়ে। পলাতক হুমায়ুন কবির দেনায়েতপুর এলাকার মৃত আবুল কালামের ছেলে ও মো. বাহার উপজেলার বামনী ইউনিয়নের বামনী গ্রামের মৃত মোস্তফা মিয়ার ছেলে।
আদালত সূত্র জানায়, নিহত রোজিনা রায়পুর পৌরসভার দেনায়েতপুর এলাকার বয়াতি বাড়ির মৃত সফিক মিয়ার মেয়ে ও হযরত খাদিজাতুল কোবরা নুরানী মহিলা মাদ্রাসার চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন। পরীক্ষা শেষে ২০১৬ সালের ১১ ডিসেম্বর বিকেলে তিনি বাসায় ফিরছিলেন। এসময় সাবেক পৌরসভা কার্যালয় ভবনের সামনের সড়কে কথিত প্রেমিক আনোয়ার হোসেন কইলার সোর্স আখি অপেক্ষা করছিলেন। একপর্যায়ে ফুসলিয়ে আখি তাকে বাগানের দিকে নিয়ে যায়। কইলার কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়ে আখি এ সহযোগিতা করে। সেখানে কইলাসহ আরো তিন সহযোগী ছিল। একপর্যায়ে কইলা ওই ছাত্রীকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়। সে প্রত্যখ্যান করলে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়। পরে অন্যদের সহযোগীতায় গাছের সঙ্গে গলার ওড়না পেছিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে বাগানে মরদেহ ফেলে রাখে। পরদিন দুপুরে স্থানীয় লোকজন মরদেহটি দেখে পুলিশকে খবর দেয়। তার পরিবারের লোকজন এসে মরদেহটি সনাক্ত করে। এঘটনায় ছাত্রীর মা মনোয়ারা বেগম বাদী হয়ে থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে রায়পুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
সূত্র জানিয়েছে, হত্যার ঘটনায় অভিযান চালিয়ে ১৭ ডিসেম্বর পশ্চিম কেরোয়া এলাকা থেকে আখি ও হুমায়ুন নামে দুইজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ১৮ ডিসেম্বর ঘটনা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় তারা লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত সিনিয়র ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ দাঊদ হাসানের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। ২০১৬ সালের ১৮ জুন পুলিশ আদালতের মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। ১১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ ও দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত এ রায় দেয়।
আরও পড়ুন
চন্দ্রগঞ্জে ১১ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৪০ শিক্ষার্থীর মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ
চন্দ্রগঞ্জে পুলিশের পৃথক অভিযানে অস্ত্র, গুলি ও মাদকসহ গ্রেফতার-২
লক্ষ্মীপুর চন্দ্রগঞ্জে আধিপত্যের জেরে সন্ত্রাসী ফাইটার বাবলুকে কুপিয়ে হত্যা