মোহাম্মদ হাছান, নির্বাহী সম্পাদকঃ মায়ের একান্ত ইচ্ছা ছেলে কোরআনের হাফেজ হবে, তাই ছেলেকে হিফয মাদ্রাসায় ভর্তি করায় মা। মায়ের অনেক ইচ্ছে মা-বাবা মারা যাওয়ার পর জানাযা পড়াবে তার কোরআনে হাফেজ সন্তান। কে জানতো মাদ্রাসায়ও কিছু কুরুচী সম্পন্ন হুজুর নামের অমানুষ পালন করছে হাফেজ বানানোর মত এই রকম অতিগুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। যাদের কুরুচীর থাবায় অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী মাদ্রাসা ছেড়ে দেয় একান্ত ঘৃণায়। ঠিক সেই রকম একটি ঘটনা ঘটেছে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ বাজারের আত্-তামরীন ইন্টারন্যাশনাল হিফযুল কুরআন মাদ্রাসায়।
চন্দ্রগঞ্জ থানা সূত্রে বিষয়টির সত্যতা জানা যায়। গত (৫ ডিসেম্বর ২০২০) শনিবার মাদ্রাসার শিক্ষক মোঃ মাসুম বিল্লাহ (২৪) মাদ্রাসার ছাত্রদের খাবার রুমে রাত আনুমানিক ১০টা ৩০ মি. এর সময় ১০বছর বয়সী তামিম(১০) (ছদ্মনাম) আবাসিক শিশু ছাত্রকে ডেকে নিয়ে বলাৎকার করে। শিশুটি এ সময় চিৎকার চেঁচামেচী করতে চাইলে ঐ শিক্ষক শিশুটির মুখ চেপে ধরে এবং কাউকে জানালে তাকে মাদ্রাসা থেকে বের করে দিবে এবং প্রচুর মারধর করবে বলে ধমক দিতে থাকে। শিশুটির ভাষ্যমতে মাসুম বিল্লাহ নামের ঐ হুজুর তাকে এ নিয়ে মোট ২/৩ বার বলাৎকার করে। এ বিষয়টি ঐ শিশু বাচ্ছাটি একই মাদ্রাসায় পড়ুয়া তার ১১ বছর বয়সের এক আত্নীয়কে জানায়। এরপর শিশুটি বাড়িতে যায় ১ সপ্তাহের ছুটিতে। শিশুটি ছুটি আসলে যেতে না চাইলে তার মা মাদ্রাসায় যাওয়ার জন্য অনেক জোরাজুরি করলে সে বলে সে মাদ্রাসায় যাবো না। মাদ্রাসার হুজুরা ভালো না। তারা আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে। তার মা একটু চাপাচাপি করলে শিশুটি জানায় হুজুর বেয়াদপ, তার সাথে রাতে খারাপ কাজ করে। এই কথা গুলো বলতে বলতে তার মা কেঁদে ফেলে। গত শুক্রবার শিশুটির মা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ/চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ মোহাম্মদ ইউসুফকে বিষয়টি মাদ্রাসায় গিয়ে জানায় এবং আমার ছেলেকে বুঝিয়ে শুনিয়ে মাদ্রাসায় রেখে আসি। পরবর্তীতে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুর রশিদ মোহাম্মদ ইউসুফ শিশুটিকে ডেকে মাদ্রাসার মান-সম্মান ক্ষুণ্ণ করছে বলে তাকে বেদম প্রহার করে। মার দেওয়ার এক পর্যায়ে শিশুটি পড়ে যায় এবং হুজুরের বেত ভেঙ্গে যায়। তার পরও অধ্যক্ষ শিশুটিকে অনেক মারে এবং মাদ্রাসা ছেড়ে চলে যেতে বলে। পরবর্তীতে (১ মার্চ) সোমবার শিশুটির মা তার সন্তানকে ফোন করে কি অবস্থা জানার জন্য। তখন ছেলেটি তার মাকে তাকে মারার বিষয়টি বলে। পরে ঐদিনই শিশুটির মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে বিষয়টি বলতে আসলে অধ্যক্ষ বলে আপনার সন্তানকে নিয়ে যান, সে যখন পড়তে চায় না তাকে অন্য মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেন। তখন আহত ছেলেকে এই অস্থায় পেয়ে তিনি চন্দ্রগঞ্জ থানায় ফোন দেয়। পরে চন্দ্রগঞ্জ থানা উপ পরিদর্শক (এসআই) মোঃ কামাল উদ্দিন ঘটনারস্থলে এসে বাচ্ছাটিকে উদ্ধার করে এবং অভিযুক্ত দুই জনকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়।
গ্রেপ্তারকৃত হাফেজ মোঃ মাসুম বিল্লাহ (২৪) কুমিল্লা জেলার মনোহর গঞ্জ থানার উত্তর হাওলা ইউপি’র ফেনুয়া গ্রামের উত্তর ফেনুয়া মৌলভী বাড়ির মোঃ হারুনুর রশিদের ছেলে। সে ঢাকার একটি মাদ্রাসা থেকে হেফজ শেষ করে। এছাড়াও ২য় অভিযুক্ত অধ্যক্ষ আব্দুর রশিদ মোহাম্মদ ইউসুফ(৪৫) ভোলা জেলার বোরহান উদ্দিন থানার কাচিয়া ইউপি’র চকডোষ গ্রামের দক্ষিণ চকডোষ ক্বারী সাহেব হুজুরের বাড়ির মৃত ক্বারী সিরাজুল হকের ছেলে। উল্লেখ্য ভিকটিম শিশুটির সামাজিক এবং তার ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে তার পরিচয়টা এখানে উল্লেখ করা হয় নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একে ফজলুল হক জানান, বিষয়টি জানার সাথে সাথে ঘটনারস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে দিই। এ বিষয়ে মামলা হয়েছে এবং অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়েছে। মঙ্গলবার আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন
লক্ষ্মীপুরে তিন শিক্ষার্থী হত্যাসহ চার মামলায় ছাত্রলীগ নেতা গ্রেফতার
লক্ষ্মীপুরে ট্রাক-সিএনজি সংঘর্ষ, নিহত-১, আহত-৬
লক্ষ্মীপুরে বীরমুক্তিযোদ্ধা তোফায়েল আহম্মেদ পাঠাগার উদ্বোধন