April 30, 2024

মুক্তিকন্ঠ

ভয়েস অফ ফ্রিডম ফাইটার ১৯৭১

লক্ষ্মীপুরে হামলার ঘটনায় মামলা, প্রধান আসামী স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা কাজী বাবলু

বিতর্কিত স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা কাজী মামুনুর রশিদ বাবলু।

শেয়ার করুন

মুক্তিকন্ঠ ডেস্কঃ

লক্ষ্মীপুরে আলোচিত ছাত্রলীগের ৪ নেতার উপর হামলার ঘটনায় মামলা করা হয়েছে, এতে প্রদান আসামী করা হয়েছে চন্দ্রগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি কাজী মামুনুর রশিদ বাবলুকে। ভিকটিম এম সজীবের মা বুলি বেগম বাদী হয়ে চন্দ্রগঞ্জ থানায় মামলা করেন। 

সোমবার (১৫ এপ্রিল) রাতে ভুক্তভোগী, জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা এম সজীবের মা বুলি বেগম এজাহার নামীয় ১১জনসহ মোট ৩১ জনের বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টাসহ বিভিন্ন ধারায় মামলা করেন। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. এমদাদুল হক।  এই মামলায় এজাহার নামীয় একজনসহ মোট ৩জনকে গ্রেপ্তার কর হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, এজাহারনামীয় ২নং আসামী আমানী লক্ষ্মীপুর গ্রামের বাঁকা মিয়ার ছেলে তাজুল ইসলাম ভূঁইয়া, পাঁচপাড়া গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে ফারুক হোসেন ও একই গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে রেজাউল করিম বাবুসহ মোট ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। কাজী বাবলুসহ আসামদের গ্রেপ্তারের অভিযান অব্যাহত আছে।

প্রসঙ্গত, গত ১২ এপ্রিল শুক্রবার দিবাগত রাত আনুমানিক ১টার দিকে কফিল উদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী এম. সজীব, সাইফুল পাটোয়ারী, সাইফুল ইসলাম জয়, মো. রাফি, তারেক হোসেন ও রাসেদসহ ৬ জন স্থানীয় একটি মাহফিল থেকে ২টি হোন্ডা যোগে চন্দ্রগঞ্জ বাজারে যায়। বাজার থেকে আসার সময় পাঁচপাড়া গ্রামের মুরাদ বাবুলের বাড়ির সামনে আসলে পূর্ব থেকে ওঁৎপেতে থাকা স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীরা এম. সজীবদের মোটর সাইকেলে গতিরোধ প্রথমে সজীবের উপর গুলি বর্ষণ করে ও এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে, পরে অন্যান্যরা সজীবকে বাঁচাতে আসলে তাদেরকেও এলোপাতাড়ি কোপ ও গুলি করতে থাকে। পরে গুরুতর আহত ৪জনকে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে সজীব, সাইফুল পাটোয়ারী ও রাফি’র শারিরীক অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের ঢাকা মেডিকেল স্থানান্তর করে। বর্তমানে সজীব ঢাকায়  পপুলার হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নিবিড় পর্যবেক্ষনে আছে। বাকী দুই জনের অবস্থার উন্নতি হলেও সজীবের অবস্থা দিন দিন অবনতি হচ্ছে।

এই মামলার প্রধান আসামী কাজী মামুনুর রশিদ বাবলু গত ১৫ বছরে ত্রাসের রাজত্ব গড়ে তুলেছে চন্দ্রগঞ্জ থানা এলাকায়। চাাঁদাবাজি, ডাকাতি, দখলবাজি, মাদক, অস্ত্রসহ সকল ধরনের অপকর্মের সাথে জড়িত ছিল এই তথাকথিত স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা কাজী মামুনুর রশিদ বাবলু। তার কারনে গত ১৫ বছরে আ’লীগের নেতাকর্মীদের উপর মামলা হয়েছে প্রায় ২’শ উপরে। অথচ রাজনৈতিক বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে চন্দ্রগঞ্জ থানায় তেমন কোন মামলাই হয় নাই দলীয় সরকারের নেতা কর্মীদের পক্ষ থেকে।

এই স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা গত ২০১২ সালে কুমিল্লায় অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়, তখন সে দীর্ঘদিন কুমিল্লায় কারাভোগ করে। সে মামলা এখনো চলমান, মূলত সে ডাকাত নাছিরের ডান হাত হিসেবে কাজ করতো, ডাকাত নাছিরের সব অস্ত্র এখন বিতর্কিত  এই সেচ্ছাসেবকলীগ নেতার কাছে। ২০১২ সালে এই বিতর্কিত নেতা জেল থেকে আসার পরে তখন ঐ সময়ে মাদক ব্যবসা ও অস্ত্র ব্যবসা, চাঁদাবাজি, সুদি কারবার করে অনেক টাকা পয়সা সঞ্চয় করে। তখন এই আন্ডার মেট্রিক পাস করা লোক টাকার জোরে ছাত্রলীগ নেতা বনে যায়। ছাত্রলীগের পদ পাওয়ার পর থেকে এই পর্যন্ত তাকে আর কেউই আটকে রাখতে পারে নি অপরাধ জগৎ থেকে। তার একটা অডিও প্রকাশ হয় যেখানে সে বলে এমপি, মন্ত্রী, এসপি সবাইকে সে ম্যানেজ করে চলে।  কেউই তার বাহিনীর ভয়ে মুখ খুলছে না। ২০১৯ সালে বিতর্কিত এই লোকের কারনে চন্দ্রগঞ্জে মেলায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একই পরিবারের ৬জন লোক মারা যায়। ঐসময় তাকে ডাকাতির প্রস্তুতি মামলায় কারাগারে প্রেরণ করা হয় এবং সে প্রায় দেড় মাস কারা ভোগ করে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর থেকে এই বিতর্কিত নেতা দখল বানিজ্য, চাঁদাবাজি করে প্রায় ২কোটি টাকা আদায় করেন বলে জানায় চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি এম ছাবির আহম্মেদ। সম্প্রতি এই বিতর্কিত নেতার দুই জন খুব কাছের সহযোগী র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এর হাতে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়। যাদের মধ্যে একজন এম. সুমন ও অন্যজন অনিক রহমান। অনিক রহমান বিষয়ে কাজী বাবলু তার ভেরিফাইড ফেসবুক আইডিতে ছবিসহ স্ট্যাটাস দেয় “অনিক রহমান আমার ভাই আল্লাহ ভরসা”।

বর্তমানে চন্দ্রগঞ্জ থানা এলাকায় ছাত্রলীগ নেতাদের উপর হামলার প্রতিবাদে দফায় দফায় আন্দোলন, বিক্ষোভ মিছিল করছে চন্দ্রগঞ্জ থানা আ’লীগ ও অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের নেতা কর্মীরা। সবার একটাই দাবী ডাকাত বাবলু’র ফাঁসি চাই। আবার অনেক নেতা কর্মীকে শ্লোগন দিতে শোনা যায় ডাকাত বাবলু’র দুই গালে জুতা মারো তালে তালে। গত শুনিবার সকালে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করে চন্দ্রগঞ্জ থানা আ’লীগের সহ-সভাপতি এম. ছাবির আহম্মেদ এর নেতৃত্বে। পরে আবার সকাল ১১টা থেকে দুুপুর ১.৩০ মি. পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা সকল নেতা কর্মী।

চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এমদাদুল হক জানান, পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে এম. সজীবসহ তাদের উপর হামলা চালানো হয়েছিল। গ্রেপ্তারকৃতদের জবাববন্দি এবং পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে এর প্রমাণ পাওয়া গেছে। তিনি আরো বলেন, চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তার করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। পরে গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়।


শেয়ার করুন

আরও পড়তে পারেন..