May 2, 2024

মুক্তিকন্ঠ

ভয়েস অফ ফ্রিডম ফাইটার ১৯৭১

লক্ষ্মীপুরে অযত্নে আর অবহেলায় বিলুপ্তির পথে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সামছুল ইসলামের সমাধি

শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা সামছুল ইসলামের সমাধী

শেয়ার করুন

মোহাম্মদ হাছান, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধিঃ

অযত্নে আর অবহেলায় বিলুপ্তির পথে লক্ষ্মীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ থানাধীন জকসিন পূর্ব বাজারে অবস্থিত পাক বাহিনীর সাথে সম্মুখ সমরে জীবন উৎসর্গকারি শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা সামছুল ইসলামের সমাধী। যে দেশের স্বাধীনতার লাল সূর্য এনে দিতে নোয়াখালীর সুধারাম থানার টগবগে যুবক সামছুল ইসলাম স্বজনদের ছেড়ে দেশ মাতৃকার ডাকে সাড়া দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়ে ছিলেন, দেশকে স্বাধীন করতে তিনি নির্বিঘ্নে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে শহীদ হয়ে ছিলেন, মৃত্যুর পরেও যিনি ফিরে যেতে পারেননি স্বজনদের কাছে সেই বীর শহীদের কবরটি অযত্নে আর অবহেলায় ভূমি গ্রাসীরা আস্তে আস্তে বিলিন করে দিতে চললেও এ নিয়ে যেন কারো কিছু করার নেই। 

জানাযায়, ১৯৭১ সালে নোয়াখালী জেলার বর্তমান সোনাইমুড়ী উপজেলার বগাদিয়া ব্রিজ এলাকায় পাক বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একজন হলেন শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা সামছুল ইসলাম। 

উল্যেখ্য বৃহত্তর নোয়াখালী জেলায় ১৯৭১ সালে পাক বাহিনীর সাথে মুক্তি বাহিনীর যে কয়টি সম্মুখ যুদ্ধ হয়েছিল তার মধ্যে সব চেয়ে ভয়াবহ ও হৃদয় বিধারক যুদ্ধ ছিল বগাদিয়ার ব্রিজ এলাকার যুদ্ধ। ১৯৭১ সালের জুলাই মাসের শেষ দিকে সুবেদার ওয়ালী উল্যার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর কনভয়ের উপর হামলা করে। পাকবাহিনীর অস্ত্র ও গেলাবারুদের সঠিক তথ্য জানা না থাকার কারণে এবং পাকবাহিনীর তুলনায় মুক্তিবাহিনীর অস্ত্র ও গেলাবারুদ কম থাকার কারণে পাক বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করে বিপুল সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা সেদিন  শহীদ হয়। এ শহীদদের একজন হলেন শহীদ সামছুল ইসলাম। যুদ্ধে পাক বাহিনীও কম ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের কয়েকটি জীপ ধবংশ করে দেয় এবং ব্রিজটি উড়িয়ে দেয়। সেদিন আতœ উৎসর্গকারিদের বীর যুদ্ধাদের বেশীর ভাগই ছিল লক্ষ্মীপুরের। সে কারণে শহীদ সামছুল ইসলামের লাশটিও অন্য শহীদের লাশের সাথে লক্ষ্মীপুরের জকসিন এলাকায় নিয়ে আসা হয়। অন্য শহীদদের লাশ স্বজনদের কাছে দিয়ে দেওয়া হলেও শহীদ সামছুল ইসলামের লাশটি সঠিক ঠিকানা না থাকায় এবং যুদ্ধ তীব্রতর হওয়ায় নোয়াখালী বা স্বজনদের কাছে পৌঁছানো যায়নি। তিনদিন পর লাশটি জকসিন বাজারের পূর্ব পাশের নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের উত্তর পাশের দাফন করা হয়। পরবর্তীতে এ কবরটি মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষথেকে সীমান প্রাচীর দিয়ে পাকা করে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে কবরের উপর দুটি আমগাছ জম্মে। গত কয়েক বছর আগে একটি ট্রাক দূর্ঘটনার শিকার হয়ে সড়কের পাশের পড়ে গেলে কবরের পশ্চিম পাশের সীমানা দেয়াল ভেঙ্গে যায়। সে দেয়ালটি আর সংস্কার করা হয়নি। 

বর্তমানে জকসিন বাজারটি বৃস্তিতি লাভ করায় এই শহীদ সমাধীটি এখন  বাজারের উপকন্ঠে চলে এসেছে। আশে পাশের অনেক মার্কেট গড়ে উঠায় এবং শহীদ সমাধির উত্তর পাশের ও মার্কেট তৈরী হওয়ায়  মার্কেট মালিকের কাছে এ সমাধিটি এখন পাশের ভূমি মালিকদের জন্য এখন পথের কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে, তাই তারা এখন আস্তে আস্তে  তা বিলিন করে দিচ্ছে বলে স্থানীয় সচেতন মহলের পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শহীদ সামছুল ইসলামের সমাধীর চার পাশের সীমানা দেয়াল আর অবশিষ্ট নেই। অথচ গত ৬ মাস আগেও তিনদিকের সীমানা দেয়াল শক্ত ভিত্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। কেবা করা দয়া করে কবরের উপরের আমগাছে কবরস্থান লিখা একটি সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিয়েছে। স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এই অবস্থা চলতে থাকলে শহীদ সমাধীটি সহসা বিলিন হয়ে যাবে। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও বিভিন্ন জনের সাথে আলাপকরেও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা সামছুল ইসলামের ঠিকানা জানা যায়নি। 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা হুমায়ূন কবির তোফায়েল জানান, “শহীদ সামছুল ইসলাম অবিবাহিত টগবগে যুবক ছিলেন। তার স্বজনরা এক সময় এসে কবরটি দেখাশুনা করতো। এখন আর কেউ আসেন না।” শহীদ সমাধীটি বার বার মেরাতের জন্য প্রশাসনের বিভিন্নস্তরে ধর্ণা দিলেও কেউ সাড়া দেয়নি। নিজে আর্থিক সংকটে থাকায় তিনি নিজে কিছু করতে পারছেন না। তিনি শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সামছুল ইসলামের সমাধীটি সংস্কারের জন্য দেশ প্রেমিক সরকারি কর্মকর্তাদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান।


শেয়ার করুন